Sponsor 2

জলি আমন পানির সাথে বাড়ে যে ধান


  

দিক বিবেচনা করে বেগুনি রঙের মালিয়াভাঙ্গর জাত সুপারিশ করা হয়। এই জাতের ফলন আশাপ্রদ ছিল না। তবে জাতটির গাঢ় বেগুনি রঙের কারণে জলি আমন ধানের সবচেয়ে খারাপ আগাছা ঝরা-ধানকে শনাক্ত করা সহজ ছিল। তা ছাড়া এই জাতের পানি ভাঙার ক্ষমতা ছিল ভালো।

১৯৫১ সালে সংকরীকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে মালিয়াভাঙ্গর ী জংলি ধান এবং গাবুরা ী মলিয়াভাঙ্গরের মধ্যে সংকরীকরণ (ক্রস) করা হয়। মালিয়াভাঙ্গর ী জংলি ধানের ক্রস থেকে উদ্ভাবিত একটি জাতের রঙিন অঙ্গজ অংশ (ঠবমরঃধঃরাব ঢ়ধৎঃ) থাকায় সহজেই তা আগাছা ঝরা-ধান থেকে আলাদা করা যেত। এই জাতের পানি ভাঙার ক্ষমতাও ভালো ছিল। তবে চাষিদের কাছে এই জাত পেঁৗছেছিল কি না তা জানা যায় না। ১৯৩৪ সালে হবিগঞ্জের বানিয়াচংয়ের নাগুরা ফার্ম প্রতিষ্ঠা হওয়ার পর থেকে জলি আমনের আটটি জাত অনুমোদিত হয়। এগুলোর মধ্যে কাত্যাবাগদার, গদালাকি, গোয়াই, দুধলাকি, ধলা আমন এবং লাল আমন বাছাইপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়। এগুলো যথাক্রমে হবিগঞ্জ-১, ২, ৩, ৪, ৮ অনুক্রম হিসেবে অনুমোদন দেওয়া হয়। হবিগঞ্জ-৬ ও ৭ সংকরীকরণ প্রক্রিয়ায় উদ্ভাবন করা হয়। এই জাতগুলোর কোনোটি চার-পাঁচ ফুট গভীর পানিতে, কোনোটি ৯ থেকে ১২ ফুট গভীর পানিতে জন্মানোর উপযোগী ছিল। ফলনও সময়ের তুলনায় খারাপ ছিল বলা যাবে না।
ব্রি প্রতিষ্ঠার পর থেকে যেন এই ধরনের জাত উন্নয়নের কথা আমরা ভুলে যেতে থাকি। তবু কিছু দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিজ্ঞানী তাঁদের কিছু কার্যক্রম নিয়ে এগোতে থাকেন। কিন্তু তা যে খুব পরিকল্পিত বা শক্তিশালী কার্যক্রম ছিল, তা মনে হয় না। এরই সূত্র ধরে বিগত শতাব্দীর আশির দশকে ব্রি থেকে কয়েকটি জাত অবমুক্তির কথা শোনা যায়। কিন্তু তা আর হয় না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে বলা হয়, মাঠপর্যায়ে প্রতিবছর প্রতিটি জায়গায় এই কৌলিক সারিগুলোর ফলন স্থিতিশীল থাকে না। এই অজুহাতেই হয়তো বীজ প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষ কৌলিক সারিগুলোকে জাত হিসেবে স্বীকার করে নিতে চাইবে না। আমার কাছে তা খোঁড়া যুক্তি বলে মনে হয়। কিন্তু যে বিষয়টি নিয়ে কথা বলা উচিত ছিল তা হলো, আধুনিক জাতের ধানের সঙ্গে জলি আমনের জাতের জাতবৈশিষ্ট্য আলাদা হওয়াই স্বাভাবিক। এখানে ফলনের চেয়ে পরিবেশের বিষয়ে জোর দিলে ভালো হতো। কিন্তু বিষয়টি নিয়ে কেউ তেমন কথা বলেছে বলে জানা যায় না।
যা হোক, জলি আমন নিয়ে আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটও জাত উদ্ভাবনের ব্যাপারে উল্লেখযোগ্য কিছু করতে পারেনি। তারা সম্ভবত এ বিষয়ে খুব বেশি আন্তরিক ছিল না। পরে তারা জলি আমন ধানের (উববঢ় ডধঃবৎ জরপব) সংজ্ঞাও পাল্টে ফেলে। তার পরও এই আমরা চাই জলি আমন ধান নিয়ে নতুন করে কিছু কাজকর্ম শুরু হোক। কারণ জাতটি শুধু কৃষকবান্ধবই নয়, পরিবেশবান্ধবও। হয়তো এই কথাটি মনে করে আমাদের দু-একজন বিজ্ঞানী নীরবে-নিভৃতে কিছু কাজ করে যাচ্ছেন। আমার বিশ্বাস, তাঁদের হাতে এখনো কিছু কৌলিক সারি আছে, যেগুলো জায়গাভেদে ভালো জাত হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার যোগ্যতা রাখে।
লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও বিভাগীয় প্রধান, উদ্ভিদ শারীরতত্ত্ব বিভাগ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, 
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url

Sponser 3